Friday, August 1, 2025
১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্যপ্রাপ্ত

>> সীমান্তে হত্যা বন্ধ না হলে লং মার্চের হুঁশিয়ারি দিলেন নাহিদ ইসলাম

>> ‘ফেব্রুয়ারিতে আপত্তি নেই, তবে যেনতেন ভোট চায় না জামায়াত’: আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের

>> ইসলামিক এনজিওকে সামাজিক ব্যবসায় এগিয়ে আসার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

>> রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে বন্ধ থাকবে গ্যাস

>> তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রের পথ বের করতে হবে: মির্জা ফখরুল

>> গুমে সেনাসদস্যরা সংশ্লিষ্ট থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে: সেনাসদর

>> সাধারণ ক্ষমার সীমা নির্ধারণ ও বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠনে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

>> নারী এশিয়ান কাপে ঐতিহাসিক সাফল্য

>> বান্দরবানে সেনাবাহিনীর অভিযানে কেএনএ কমান্ডারসহ নিহত ২

>> ঢাকাসহ যেসব অঞ্চলে ঝড়বৃষ্টির আভাস

আপনি পড়ছেন : Reports & Research

পাঠ প্রতিক্রিয়া

সাদাত হোসেনের উপন্যাস ''তুমি সন্ধ্যা অলকানন্দা''

তুমি সন্ধ্যা অলকানন্দা- সাদাত হোসাইন(এ বছর বই মেলায় প্রকাশিত)

খায়রুন নাহার
2025-04-18 ৭:৪০পিএম
সাদাত হোসেনের উপন্যাস ''তুমি সন্ধ্যা অলকানন্দা''
বইটি হাতে পেয়েই ছবিটি তুলেছিলাম


হয়তো আবার দেখা হবে
হয়তো অপেক্ষাও ভালো,
সেই কবে তোমাকে দেখেছি —
ফুরিয়ে যাচ্ছে মহাকালও!
~ তুমি সন্ধ্যা অলকানন্দা/ সাদাত হোসাইন।
উপন্যাস থেকে নেয়া কিছুু লাইন-

রাত্রি বললো, 'আপনাকে আমার কি মনে হয় জানেন?'
'কী?'
'দুঃখী হাস্যমুখী।'
'দুঃখী হাস্যমুখী?' অবাক গলায় জিজ্ঞেস করল ধ্রুব।
'হুম। এখন থেকে আমি আপনার নাম দিলাম দুঃখী হাস্যমুখী।'
শুনে আবারও হাসে ধ্রুব। তারপর বলে, 'এই শব্দতো এর আগে কখনো শুনিনি। এর মানে কী?'
'এই যে আপনি সারাক্ষণ হাসেন। দেখে মনে হয়, আপনার কোথাও কোনো দুঃখ নেই, বিষাদ নেই, একাকীত্ব নেই। অথচ বুকের ভেতর আস্ত এক নোনাজলের সমুদ্র পুষে ঘুরে বেড়ান।'
'এমন মনে হয় আমাকে?'
'আগে হতো না। এখন হয়। আমার খুব প্রিয় এক শিক্ষক ছিলেন। তিনি বলতেন মানুষ হলো সোনামুখী সুঁইয়ের মতো। আর তার জীবন যেন নকশিকাঁথা। সে সারা জীবন অবিরাম চেষ্টা করে যায় নিজের জীবনটাকে নিখুঁত কারুকার্যময় করে ফুটিয়ে তুলতে। নানা রঙের সুতোয়, গল্পে রাঙিয়ে তুলতে। কিন্তু দিনশেষে দেখে, সেখানে কেবল দুঃখের রঙ আর গল্পই গাঢ় হয়ে উঠেছে। সে মূলত তার জীবনের নকশিকাঁথায় জীবনভর খুব যত্ন করে অনন্ত হাহাকার আর আক্ষেপের গল্প সেলাই করে গেছে।'

ধ্রুব কথা বলল না। চুপ করে রইলো। রাত্রি বলল, 'স্যার এই কথাটা আরও সুন্দর করে বলতেন। বলতেন-
দুঃখী তুই? ঠিক যেন নকশিকাঁথার বুকে সোনামুখী সুই!'

বইটা পড়ে পাঠিকা হিসেবে রিভিউ দিতে ইচ্ছে হলো।
প্রথমত লেখককে মনে মনে ধন্যবাদ জানাই তার প্রকাশিত নতুন উপন্যাস -‘ তুমি সন্ধ্যা অলকানন্দা ‘পাঠক মহলে উপহার দেওয়ার জন্যে।
আসলে বইটা শেষ করেছি দুই দিন আগেই আমার আবার বই পড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগে।হজম করতে সময় লেগে যায় আরকি।উপন্যাসটা পড়ছিলাম আর মনে হচ্ছিলো এই গল্প আমার জানা, জীবনে ক্ষেত্রবিশেষে"দুঃখী হাস্যমুখী" হয়তো আমরা প্রত্যেকেই। জীবনে একবার হলেও কাউকে রাত্রি,তৃষা, ইরা, মীরা কিংবা ধ্রুবদের মতনই পরিস্থিতি, আবেগ,অনুভূতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। জীবনানন্দের কবিতার লাইন মনে পড়ছে,,,,,,
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়
আরো-এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে।
ভালোবাসা কি কখনো ফুরিয়ে যায়? নাকি এটা একবার জন্ম নিলে আমাদের আত্মায় গেঁথে থাকে চিরকাল?নাকি কিছু ভালোবাসা কখনোই শেষ হয় না!কেবল রূপ বদলায়, মানুষের ভেতরেই থেকে যায়, ঠিক যেমন নদীর জল শুকিয়ে গেলেও তার পথ মাটির গভীরে রয়ে যায়।বইটা পড়তে গিয়ে মনে হলো, ভালোবাসা আসলে একটা অপেক্ষা। সেটা কোনো নির্দিষ্ট মানুষের জন্য নয়, বরং একটা অনুভূতির জন্য—যেটা একদিন ছিল, এখন নেই, কিন্তু থেকে গেছে মনের গহীনে। আমরা হয়তো সেই অনুভূতির কাছে বারবার ফিরে যেতে চাই, কিন্তু যেতে পারি না। সময় আমাদের টেনে আনে বাস্তবতার কঠিন মাটিতে, অথচ মনের ভেতর একটা নদী তিরতির করে বয়ে চলে অলকানন্দার মতন।
বরাবরই লেখকের ভাষা যেন আত্মার কথা বলে।লেখক জানেন কীভাবে শব্দ দিয়ে অনুভূতির শরীর গড়তে হয়, কীভাবে একটুখানি অভিমান দিয়ে একটা সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে হয়, কীভাবে নীরবতাকে কণ্ঠস্বর দিতে হয়। ভালোবাসা লেখকের লেখায় কোনো সরল আনন্দ নয়, বরং এক গভীর যন্ত্রণা, এক অব্যক্ত আর্তি।
আমরা সবাই হয়তো জীবনের কোনো না কোনো সন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে থাকি, অপেক্ষা করি। কেউ ফিরে আসে, কেউ আসে না। কিন্তু সেই অপেক্ষাগুলোই তো আমাদের ভালোবাসার আসল রূপ। এই উপলব্ধিটা এত সুন্দরভাবে তুলে আনলেন, লেখক আমাদের হারিয়ে যাওয়া অনুভূতিগুলোকে আবার ফিরে দেখতে শেখান, যা হয়তো আমরা নিজেরাও ভুলে গিয়েছিলাম বা ভুলে যাই।
শব্দের মধ্যে এতখানি আত্মা ঢেলে দেওয়া, আমাদের মনের সবচেয়ে নরম জায়গাগুলোকে ছুঁয়ে দেওয়ায় পটু বলা যায় লেখককে, শব্দেরা যেন চিরকাল এভাবেই মনের অলকানন্দার ঢেউ তুলতে থাকে।
মানুষ আসলে বুকভর্তি অসংখ্য নাম না জানা অসুখ নিয়ে হাসিমুখে ঘুরে বেড়ায়। অথচ তার ওই হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকে ভীষণ দহন, প্রবল যন্ত্রণা, কষ্টক্লান্ত কান্না। কিন্তু সেই কান্না, যন্ত্রণা কিংবা অসুখ দেখার ফুরসৎ কই মানুষের?
লেখকের চিঠিটা যেন পাশে দাঁড়িয়ে বলে যাওয়া কথা।
যাই হোক নটে গাছটি মুড়িয়ে এবার আসল কথায় আসি,,বই পড়ুন এই বই পড়তে হবে সেটা না আপনার যা খুশি করুন আর সাথে বই পড়ুন।