Friday, August 1, 2025
১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্যপ্রাপ্ত

>> সীমান্তে হত্যা বন্ধ না হলে লং মার্চের হুঁশিয়ারি দিলেন নাহিদ ইসলাম

>> ‘ফেব্রুয়ারিতে আপত্তি নেই, তবে যেনতেন ভোট চায় না জামায়াত’: আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের

>> ইসলামিক এনজিওকে সামাজিক ব্যবসায় এগিয়ে আসার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

>> রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে বন্ধ থাকবে গ্যাস

>> তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রের পথ বের করতে হবে: মির্জা ফখরুল

>> গুমে সেনাসদস্যরা সংশ্লিষ্ট থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে: সেনাসদর

>> সাধারণ ক্ষমার সীমা নির্ধারণ ও বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠনে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

>> নারী এশিয়ান কাপে ঐতিহাসিক সাফল্য

>> বান্দরবানে সেনাবাহিনীর অভিযানে কেএনএ কমান্ডারসহ নিহত ২

>> ঢাকাসহ যেসব অঞ্চলে ঝড়বৃষ্টির আভাস

আপনি পড়ছেন : Reports & Research

ইমরান কায়েসের বই ''ইস্তানবুল প্রিয়''

পাঠ প্রতিক্রিয়া

খায়রুন নাহার
2025-04-17 ৮:১০পিএম
 ইমরান কায়েসের বই ''ইস্তানবুল প্রিয়''
বইটি হাতে পেয়েই ছবিটি তুলেছিলাম

''ইস্তানবুল প্রিয়'' বইটা পড়ে কেমন লাগলো জানাতে ইচ্ছে হলো।বইটির লেখক ইমরান কায়েস।প্রায় বছর তিনেক ধরে ফেসবুকে আমি উনার লেখা পড়ি।আমার বিলাভড হাসব্যান্ড আমাকে ইমরান কায়েসের লেখার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন ।একটা সময় ধরে ধরে উনার লেখনি আমাকে পড়তে দিতেন ।এখন আর পাঠান না মনে হয় বুঝে গেছেন যে আমি ইমরান কায়েসের কোনো পোস্ট আর বাদ দেই না।বলতে গেলে একরকম ভক্তই হয়ে গেছি আরকি।লেখক গতানুগতিক চিন্তাধারার বাইরে যেয়ে একটু অন্যভাবে ভাবতে শেখান ।

ফেব্রুয়ারিতে লেখকের পোস্ট দেখে জানতে পারি এবারের বইমেলায় তার বই প্রকাশিত হয়েছে,ব্যাস! রকমারি থেকে বইটা নিয়ে নিলাম। বইটা পড়া শুরু করে কোনো একটা অপেক্ষার শেষ হয়ে যাবে ভেবে বইটা কিছুদিন রেখে দিলাম। কিছু কিছু সময়ে প্রাপ্তির চেয়ে অপেক্ষাই বেশি আকাঙ্ক্ষার হয় কিনা আমি ঠিক জানি না।
"ইস্তানবুল প্রিয় "বইটা শুরুতে ভ্রমণ উপন্যাস বলে মনে হলেও আদোতে এটি ভ্রমণ উপন্যাস বললে ভুল হবে।সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বইটির এতো সেল হচ্ছে দেখে লেখক নিজেই কনফিউজড হয়েছিলেন, দ্বিতীয়বারের মতন যখন মুদ্রণ করা লাগলো। যে ঘটনা কি!লোকে কি ভ্রমণ উপন্যাস ভেবে হুমড়ি খেয়ে বইটা কিনছে কিনা?তবে আমার মনে হয়েছে লেখক নিজেই বুঝতে পারেননি তিনি এত জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছেন।এবার বইয়ের যেসব কথা মনে ধরেছে সেসব কিছু বলি!
মানুষের মূল সমস্যা কী জানেন?
মানুষ বর্তমানে থাকতে পারে না।মানুষ একটা অস্থির ইলেক্ট্রনের মতন সারাক্ষণ ভবিষ্য‌ৎ আর অতীতে লাফিয়ে লাফিয়ে দিক পরিবর্তন করে।আমরা অতীতের ভূত কাঁধে নিয়ে হাঁটি। ভবিষ্যৎের অ্যাংজাইটি বুকের মধ্যে রাখি।আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান কী হওয়া উচিত,জানেন?বর্তমানের মানুষ হওয়ার চেষ্টা করা।এটিকে বলা হয় ইবন আলওয়াাক্ত।
আমরা মানুষকে যতটা আপন ভাবি,মানুষ আরেকটা মানুষের আসলে অতটা আপন হয়না।আমাদের ভ্রম হয় । ইলিউশন হয়।আমরা সম্পর্কে নিজেদের খুব বেশি দ্রবীভূত করে ফেলি।মানুষের অত দ্রবীভূত হতে হয় না।
বড় হয়ে ভালোবাসাটা আমরা সবচেয়ে বেশি ভুল পড়ি ।ইংরেজিতে যেটাকে বলে “মিসরিড”।আমরা ভালোবাসা বলতে যা মনে করি,তা আসলে ঠিক ভালোবাসাও না।আমরা আসলে আরেকটা মানুষকে দিয়ে নিজেকে ভালোবাসাই ।এই আধুনিক সভ্যতা,এই একাকী হওয়ার যুদ্ধ আমাদের সেলফ অবসেসড করে।আমরা কমিউনাল যোগাযোগ হারাই।নিজেকে যত্ন করার,আদর করার লোক খুঁজে বেড়াই।তারপর সে চলে গেলে যতটা না শুধু ভালোবাসা হারায় তার থেকে বেশি আঘাত লাগে আমাদের ইগোতে।রাগ হয়,অস্থিরতা আসে,নিজের দখলকৃত বস্তু হারানোর কষ্ট আসে।এই জমানার ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণাটা ঠিক বিশুদ্ধ ভালোবাসাহীনতা না।আমাদের সেক্সুয়াল অবজেক্ট হারানোর যন্ত্রণা আছে,কোনো একটা প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ার স্বাদ আছে,নিজের ইগোতে আঘাত লাগার ঘা ও আছে।
ভালোবাসা ঠিক যেভাবে আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়েছে,যেভাবে নানাভাবে তাকে দেখানো হয়,সর্ম্পকটাতো আসলে অত সরল না।এইটা একটা জার্নির মতন।অনেক স্তর পেরিয়ে পেরিয়ে যেতে হয়।
ভালোবাসার সম্পর্ক শুরু হয় দিলকাশি থেকে,মানে আকর্ষণ থেকে,সেটা পরের স্তরে যায় ওউন্স বা ইনফ্যাচুয়েশনে,যখন অস্থিরতা বাড়ে,মন আরও দ্রবীভূত হয়,যোগাযোগ ঘটলে ভয় কমে এলে,অপর পক্ষের আগ্রহ পেলে সম্পর্কটা পরের স্তরে যায়।যার নাম মোহাব্বত।
তার পরের স্তর দীর্ঘ এবং কষ্টসাধ্য ।ইনহিবিশন প্রেকটিস করা লাগে। দুনিয়ার নানাবিধ আকর্ষণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হয়,তাহলেই পরের আরও গভীরের স্তরে দুজন অবস্থান করে। এই গুরুত্বপূর্ণ স্তরের নাম আকিদা বা বিশ্বাস।
আকিদার স্তরের গভীরের স্তরটা ইবাদত।প্রার্থনা করা। আরও গাঢ়,আরও ঘন সে সম্পর্ক।দুনিয়ার বোঝাপড়ায় ,দুনিয়ার নানা ডিসট্রাকশনে সে স্তরে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটা যাওয়া কঠিন ।
পরের স্তরের নাম জুনুন।অ্যাবসোল্যুট ম্যাডনেস।এই স্তর মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক সাধারণত স্পর্শ করে না।এ ভালোবাসা এ সম্পর্ক সৃষ্টিকর্তার জন্য।নিজেকে সম্পূর্ণ দ্রবীভূত করে ফেলা।ভালোবাসায় হারিয়ে যাওয়া।
এরপরের স্তর হচ্ছে মৃত্যু।মৃত্যু আমাদের সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে ভালোবাসার শেষ স্তর।ডিপেস্ট কমিউনিকেশন।
মানুষে মানুষে সম্পর্কের ব্যাপারে আমাদের আসলে সাবধান থাকা লাগে।খুব বিপদজ্জনক এক যাত্রা এটা।আরেকটা মানুষতো ঈশ্বর না। তার মনে জাগতিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে।
উপন্যাসে শিরিন ইস্তানবুলে বেড়াতে বেড়াতে তার অতীতে ঘুরে বেড়িয়েছে। মানুষের যে নরম স্মৃতি বুকের মধ্যে অগোচরে রয়ে যায় যাতে আলতো ছোঁয়া পেলে অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পরে অমন স্মৃতি।
প্রায় চল্লিশের শিরিন পিছনে তাকিয়ে দেখে ওর আব্বা আসলে কাউকে মন খুলে কিছু বলেন নি,আব্বাকে কোন দিন জরিয়ে ধরেনি সে,মায়ের প্রতি শিরিনের একরাশ অভিমান।
শিরিন অতীত থেকে বের হতে পারে না, সাবেরের সাথে এত হাসি,গান, চুম্বন,সন্তানের পর ও সাবের কেন অন্য কাউকে ভালোবাসে? একজন মানুষ কি কয়েকজনকে একই রকম ভাবে ভালোবাসতে পারে? এই প্রশ্ন মাথায় নিয়ে শিরিন ইস্তানবুলে ঘুরে বেড়ায়,শিরিন হয়ত ইস্তানবুল ঘুরে এসে চেষ্টা করবে বর্তমানের মানুষ হবার, সে পারবে কিনা আমি ঠিক জানি না।
কি এক ঘোর নিয়ে শিরিন ইস্তানবুলে আয়া সোফিয়া,তোপকাপি প্যালেসে ,বাগদাদ প্যাভিলিয়নে ঘুড়ে বেড়ায় সাথে পায় মুরাদের সঙ্গ। শিরিনকে মনে হয়েছে সাবধানে, নিরাপদে থাকতে চাওয়া মানুষ। সেই মানুষ সদ্য পরিচিত হওয়া বিদেশি মুরাদের সাথে রাতে লুকিয়ে একটা মর্গে যাবে বলে মনে হয় না, কিন্তু সে যায়, ঘোরের মধ্যেই হয়ত সে চলে যায় কিংবা লেখক শিরিনকে চিরাচরিত চরিত্র থেকে বের করতে চেয়েছেন বলেই সে যায় কিংবা সাবেরের সাথে শিরিনের বিচ্ছেদই শিরিনকে চিরাচরিত সাবধানতা নিয়ে আর ভাবায় না।তারপর ইস্তানবুুলের গোরোস্থানে ঘুুমিয়ে পড়ার ঘটনাও অবাক করে।
শিরিনের বান্ধবী তাহমিনাকে দেখে মনে হবে এমন গোছানো জীবনই মানুষ চায়।
শিরিন তার ভাঙ্গা মন নিয়ে ইস্তানবুল ঘুরে বেড়ায়, সে আমরা থেকে আমির অস্তিত্ব অনুভব করে। এত সহজ ভাষায় লেখক মানব মনে ভ্রমণ করেন বলেই কিনা জানি না তার লেখা পড়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকবো।বইটা শেষ করে বেশ কিছুদিন ঘোরের মধ্যে ছিলাম,বিশেষ করে শিরিন ইস্তানবুলে হেঁটে হেঁটে যখনই মনে করেছে টাঙ্গাইলে তার শৈশবের কথা,স্কুলের প্রিয় বাংলা খাতাটা,সবুজ গ্যাছো ব্যাঙের পায়ের পাতলা আবরণটার কথা,বাড়ির দরজার সামনে থাকা আব্বা আম্মা ভাইয়ের জুতোজোড়ার পাশে নিজের জুতো সাজিয়ে রাখা।ইস্তানবুলের বসফরাস নদী আর যমুনা নদী যেন দেখতে একই লাগে শিরিনের ।ফেরার পথে মুরাদের চিঠি পায় শিরিন,এখানে লেখক আর জানতে দেননি শিরিন আর মুরাদের কাছে ফিরবে কিনা!