শিল্প খাতে যখনই কোনো সংকট তৈরি হয়, তখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তেমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ভাসমান মনে হয়, কোথায় যেতে হবে জানি না বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিয়ে আয়োজিত ‘ওএসএইচ সম্মেলন ২০২৫’–এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন এম সাখাওয়াত হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
অনুষ্ঠানে শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘যখনই কোনো সংকট হয়, তখন কিন্তু আমরা কাউকে খুঁজে পাই না। কিসের ট্রাইপার্টাইট (সংকট নিরসনে ত্রিপক্ষীয় কমিটি) আর কিসের কী!সংকট যখন আসে তখন আমি আর শ্রমসচিব নিজেদের ভাসমান অবস্থায় দেখি। কোথায় যেতে হবে জানি না। সুতরাং সংকটকালে সবাই টিম (একত্রে) হিসেবে কাজ না করলে তা কার্যকর হবে না।’
শ্রম উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই মন্ত্রণালয়ের (শ্রম) দায়িত্ব নিয়েছি সাত মাস হলো। এ সময়ে যে পরিমাণে সংকট হয়েছে, সেগুলো সব কিন্তু এই সাত মাসে তৈরি হয়নি। যেমন অনেক তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের দুই-তিন বছরের বেতনও বকেয়া আছে। এই গতকাল বিএটি বাংলাদেশের (ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বাংলাদেশ) কিছু লোক এসেছিলেন, যাঁদের ২০১৯ সালে ছাঁটাই করা হয়েছিল। আমি (এই প্রসঙ্গে) বিএটিকে বলেছি, ফলো দ্য ল অর ওয়াইন্ড ইয়োর বিজনেস অ্যান্ড গো (আপনারা হয় আইন মেনে চলেন, না হয় এ দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যান)। বাধ্য হয়ে এমন শক্ত কথা বলতে হয়েছে। এ ছাড়া অন্য উপায় ছিল না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মানুষ নির্বিঘ্নে কর্মক্ষেত্রে যাবে, অথচ আমরা কাজের জায়গাগুলোকে মৃত্যুকূপ বানিয়ে রেখেছি। শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ দিয়েছে, তার প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ করা হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি। সে জন্য সময় নির্দিষ্ট কর্মকৌশল গ্রহণের সুপারিশ এসেছে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্যানুসারে, সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা কিংবা অসুস্থতার কারণে বিশ্বে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে অন্তত একজন কর্মী মারা যান। কর্মক্ষেত্র–সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তা বৈশ্বিক জিডিপির ৪ শতাংশের সমান।
অনুষ্ঠানে একাধিক বক্তা বলেন, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনা কমলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বাড়ছে। মতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পরও প্রায় প্রতিবছর কমবেশি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর অর্থ পেশাগত নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েই গেছে। তাঁর অনুমান, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে আরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে; এসব সংবাদে আসছে না। এসব তথ্য পেলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও পেশাগত সুরক্ষার বিষয়ে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।
জীবনের অধিকারের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য, বর্তমানে সেটাই সবচেয়ে বড় বৈষম্য বলে মন্তব্য করেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। পেশাগত নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার; এটা দর-কষাকষির বিষয় নয়।