আজ কবরীর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী
                        
                        
                        
                                                    স্টাফ রিপোর্টার
                                                2025-04-17 ৭:৫০ পিএম
                                                
                        ছবি:সংগৃহীত 
   
                         নায়িকা বলতেই এ দেশের মানুষের চোখে যাদের মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে, কবরী সেই তালিকায় প্রথম দিকের সদস্য।তার চঞ্চল স্বভাবের সাথে মিষ্টি হাসি, যে কাউকে মায়ার জালে বন্দি করে নিতো। যার প্রমাণ বিস্তৃত পরিসরে মিলেছে ঢাকাই সিনেমার ক্যানভাসে। বাংলা ছবির স্বর্ণালি যুগ বলতে যে সময়কে বোঝানো হয়, সেই সময়ের সফলতম নায়িকা তিনি। ভক্তরা যাকে ভালোবেসে ‘মিষ্টি মেয়ে’ ডাকতেন। তাকে ঘিরে এত কথার অবতারণার কারণ, আজ (১৭ এপ্রিল) তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২১ সালের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী। মহামারি করোনায় যে কজন শিল্পী বিদায় নিয়েছেন, কবরী তাদের অন্যতম। নায়িকা বলতেই এ দেশের মানুষের চোখে যাদের মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে, কবরী সেই তালিকায় প্রথম দিকের সদস্য। সিনেমার বাণিজ্যিক সাফল্য থেকে শুরু করে প্রশংসা ও জনপ্রিয়তা, কোনও কিছুর কমতি ছিল না তার ক্যারিয়ারে। ৭০ বছরের জীবন পেয়েছিলেন কবরী, এরমধ্যে ৫৬ বছরই ছিলেন রূপালি ভুবনে, সিনেমার সঙ্গে। তাই নন্দিত এ তারকার প্রয়াণ ভক্তদের মনে বিষাদের যে নদীর জন্ম দিয়েছে, তা বয়ে চলছে অবিরাম।কবরী নামে পরিচিত, প্রতিষ্ঠিত হলেও তার আসল নাম মিনা পাল। ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্ম। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার চেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল শিল্পচর্চায়। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে ওঠেন তিনি।খ্যাতিমান সুরকার সত্য সাহার সূত্রেই কবরীর সিনেমায় আগমন। নির্মাতা সুভাষ দত্তকে কবরীর ছবি দিয়েছিলেন সত্য সাহা। সেই ছবি দেখে সম্ভাবনার গ্রিন সিগন্যাল পান নির্মাতা। কবরীকে ঢাকায় আসতে বলেন অডিশনের জন্য। অডিশন শেষে নিজের নির্মাণে প্রথম সিনেমা ‘সুতরাং’র মুখ্য চরিত্রে সুযোগ দেন ১৪ বছরের কিশোরীকে। ব্যাস, সূচনা হয় ঢাকাই সিনেমার চিরস্মরণীয় এক অধ্যায়ের।এরপর ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘দেবদাস’, ‘অধিকার', ‘বেঈমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘দীপ নেভে নাই’র মতো অসংখ্য দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই কিংবদন্তি।
                                                                     
 
সমসাময়িক প্রায় সব নায়কের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল কবরীর। চমকপ্রদ বিষয় হলো, তার নায়ক হয়েই সিনেমায় অভিষেক ঘটেছিল কিংবদন্তি চিত্রনায়ক আলমগীর, উজ্জ্বল, জাফর ইকবাল, সোহেল রানা ও ফারুকের। যেটা ঢালিউডের ইতিহাসে বিরল-বিশেষ ঘটনা বটে।সিনেমা নির্মাণেও নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন কবরী। শুরুটা করেছিলেন ‘আয়না’ দিয়ে। সর্বশেষ ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন। তবে এর কাজ শেষ হওয়ার আগেই মারা যান তিনি। ফলে ছবিটি আর পূর্ণতা পায়নি।রাজনীতিতেও সরব ছিলেন কবরী। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। যুক্ত ছিলেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে। ২০১৭ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’ প্রকাশ পায়।১৯৭৮ সালে ‘সারেং বৌ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন কবরী। এরপর ২০১৩ সালে একই পুরস্কার আয়োজনে আজীবন সম্মাননা পান তিনি।কবরীর প্রয়াণ দিনে (১৭ এপ্রিল) বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আই। ‘সাময়িকী’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে আজকের (১৭ এপ্রিল) বিশেষ পর্বে বেলা দেড়টায় দেখানো হয়েছে কবরীর জানা-অজানা নানা তথ্য ও কথোপকথন। প্রচার হয়েছে তার অভিনীত চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গান ও দৃশ্য। দেশের অন্য কোনও চ্যানেলে এ নিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের খবর মেলেনি।এদিকে কবরীর পরিবার কিংবা শিল্পী সমিতি অথবা বিএফডিসি থেকে কোনও আয়োজনের খবর পাওয়া যায়নি। সে হিসেবে বলা যেতে পারে, মৃত্যুর চার বছরের মাথায় অনেকটাই ম্লান হয়ে উঠলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পের সবচেয়ে উজ্জ্বল নায়িকা কবরীর মুখ!