ক্যারিয়ারে প্রথমবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডসের সর্বোচ্চ সম্মান বর্ষসেরা অ্যালবাম পুরস্কার জিতলেন আমেরিকান সুপারস্টার বিয়ন্সে। ‘কাউবয় কার্টার’ অ্যালবামের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি উঠেছে তার হাতে। এবারের আসরে মোট তিনটি ট্রফি জিতেছেন তিনি। তার ‘কাউবয় কার্টার’ সেরা কান্ট্রি অ্যালবাম পুরস্কারও জিতেছে। এছাড়া এই অ্যালবামের ‘টু মোস্ট ওয়ান্টেড’ গানটির সুবাদে বিয়ন্সে ও মাইলি সাইরাস সেরা কান্ট্রি দ্বৈত/দলীয় পারফরম্যান্স পুরস্কার পেয়েছেন।
সেরা কান্ট্রি অ্যালবাম পুরস্কারটি তুলে দিয়েছেন আমেরিকান পপতারকা টেলর সুইফট। তার ‘দ্য টর্চার্ড পোয়েটস ডিপার্টমেন্ট’কে হটিয়ে বর্ষসেরা অ্যালবামের ট্রফি বাগিয়ে নিয়েছেন বিয়ন্সে। একই বিভাগে আরও মনোনয়ন পেয়েছে ‘হিট মি হার্ড অ্যান্ড সফট’ (বিলি আইলিশ), ‘ব্র্যাট’ (চার্লি এক্সসিএক্স), “শর্ট এন’ সুইট” (সাবরিনা কার্পেন্টার), ‘দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অব অ্যা মিডওয়েস্ট প্রিন্সেস’ (চ্যাপেল রোন), ‘নিউ ব্লু সান’ (আন্ড্রে থ্রি থাউজেন্ড) ও ‘জেসি ভলিউম ফোর’ (জ্যাকব কলিয়ার)।
বিয়ন্সে ও সুইফট ২০১০ সালের পর আবারও বর্ষসেরা অ্যালবাম বিভাগে একে অপরের মুখোমুখি হলেন। ১৫ বছর আগের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন সুইফট। রেকর্ডসংখ্যক চারবার গ্র্যামির অ্যালবাম অব দ্য ইয়ার পুরস্কার উঠেছে তার হাতে। গতবার ‘মিডনাইটস’ এই স্বীকৃতি এনে দিয়েছে তাকে। এবারের আসরে আরও পাঁচটি বিভাগে মনোনীত হয়েছেন তিনি। তবে তাকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। এবার শেষ হাসি হাসলেন বিয়ন্সে। তার ‘কাউবয় কার্টার’ অ্যালবামকে আমেরিকার কান্ট্রি মিউজিক ও সংস্কৃতিতে কালোদের উপেক্ষিত শেকড়ের প্রতি সম্মান হিসেবে দেখেছেন বিশ্লেষকরা।
বর্ষসেরা অ্যালবাম পুরস্কার গ্রহণের পর মঞ্চে নিজের মেয়ে ব্লু আইভি কার্টারের পাশে দাঁড়িয়ে বিয়ন্সে বলেন, ‘এখন নিজেকে খুব পরিপূর্ণ লাগছে। একইসঙ্গে সম্মানিত বোধ করছি। অনেক, অনেক বছর হয়ে গেলো।’
পুরস্কারটি কান্ট্রি মিউজিকে কৃষ্ণাঙ্গদের অন্যতম পথিকৃৎ ও গ্র্যান্ড ওলে অপ্রি ভেন্যুতে একক সংগীত পরিবেশন করা প্রথম কালো নারী লিন্ডা মার্টেলকে উৎসর্গ করেছেন বিয়ন্সে। ‘কাউবয় কার্টার’ অ্যালবামের কয়েকটি গানে লিন্ডা মার্টেলের নাম উল্লেখ রয়েছে। এর আগে চারবার বর্ষসেরা অ্যালবাম বিভাগে মনোনয়ন পেলেও পুরস্কার জেতা হয়নি বিয়ন্সের। পঞ্চমবারে এসে নিজের অষ্টম অ্যালবাম ‘কাউবয় কার্টার’-এর মাধ্যমে সেই অতৃপ্তি ঘুচলো তার। বিয়ন্সের ঘরে এখন গ্র্যামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫টি। গ্র্যামির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার জয়ের রেকর্ড ৪৩ বছর বয়সী এই তারকার দখলে।
৬৭তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডসে সর্বোচ্চ ১১টি মনোনয়ন পেয়েছেন বিয়ন্সে। একই আসরে এর আগে এত মনোনয়ন আর কোনও গায়িকা পাননি। গ্র্যামিতে তার পাওয়া মনোনয়নের সংখ্যা ৯৯টি। এদিক দিয়েও তিনিই সবার ওপরে।
এবারের আসরে সর্বাধিক পাঁচটি ট্রফি জিতেছেন আমেরিকান র্যাপার কেন্ড্রিক ল্যামার। তার গাওয়া ‘নট লাইক আস’ পেয়েছে বর্ষসেরা রেকর্ডিং ও বর্ষসেরা গানের পুরস্কার। গ্র্যামির ইতিহাসে বর্ষসেরা রেকর্ডিং বিভাগে হিট-হপ গানের পুরস্কার জয়ের দ্বিতীয় ঘটনা এটি। ২০১৯ সালে ‘দিস ইজ আমেরিকা’ গানের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি পান চাইল্ডিশ গ্যাম্বিনো (ডোনাল্ড গ্লোভার)।
‘নট লাইক আস’ গানের সুবাদে সেরা র্যাপ পারফরম্যান্স, সেরা র্যাপ গান ও সেরা মিউজিক ভিডিও পুরস্কার তিনটিও জয় করেছেন ৩৭ বছর বয়সী কেন্ড্রিক ল্যামার। সেরা র্যাপ অ্যালবাম পুরস্কার জিতেছে আমেরিকান র্যাপার ডোচি’র ‘অ্যালিগেটর বাইটস নেভার হিল’। গ্র্যামির ইতিহাসে তিনি তৃতীয় গায়িকা যার হাতে এই স্বীকৃতি উঠলো।
এবারের গ্র্যামিতে সেরা নতুন সংগীতশিল্পীর পুরস্কার জিতেছেন আমেরিকান গায়িকা চ্যাপেল রোন। অনুষ্ঠানে নিজের জনপ্রিয় গান ‘পিঙ্ক পনি ক্লাব’ পরিবেশন করেন তিনি। ২৬ বছর বয়সী এই তারকা মঞ্চে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংগীতশিল্পীদের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাসহ সচ্ছল জীবনযাপনের উপযোগী সম্মানী দেওয়ার আহ্বান জানান। নিজের দুঃসময়ের স্মৃতি রোমন্থন করেন তিনি যখন স্বাস্থ্যবীমা না থাকায় নিজেকে মানুষ মনে হতো না তার। কারণ তখন একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তার সঙ্গে চুক্তি করেও পরে অখ্যাত বলে সেটি বাতিল করেছিল।
চ্যাপেল রোন বলেন, ‘আমি নিজেকে বলতাম, যদি কখনও সংগীত জগতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের সামনে এই মঞ্চে দাঁড়াতে পারি, তাহলে ভালোভাবে বেঁচে থাকার উপযোগী সম্মানী দিতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পীদের কাছে দাবি জানাবো যারা কাড়ি কাড়ি ডলার মুনাফা পাচ্ছে।’
আমেরিকান তারকা সাবরিনা কার্পেন্টারের “শর্ট এন’ সুইট” সেরা পপ ভোকাল অ্যালবাম ও ‘এসপ্রেসো’ গানটি বেস্ট পপ সলো পারফরম্যান্স পুরস্কার জিতেছে।
সেরা লাতিন পপ অ্যালবাম পুরস্কার জিতেছে শাকিরার ‘লাস মুখেঁরেস ইয়া নো ইয়োরান’। এদিন ছিল তার জন্মদিন। অনুষ্ঠানে দুটি গান গেয়ে শুনিয়েছেন ৪৮ বছর বয়সী এই কলম্বিয়ান তারকা।
২০২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত প্রকাশিত গান, সুর-সংগীত ও শিল্পীদের মধ্য থেকে ৯৪টি বিভাগে সেরাদের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে এবারের আসরে। গ্র্যামির আয়োজক রেকর্ডিং অ্যাকাডেমির ১৩ হাজারের বেশি সদস্যের ভোটে বিজয়ী তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর থেকে নতুন বছরের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের কণ্ঠশিল্পী, গীতিকবি, সুরকার, সংগীত পরিচালক, প্রযোজক, প্রকৌশলী ও গান-বাজনার সঙ্গে যুক্ত পেশাদার ব্যক্তিরা ভোট দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ভোটার নানান বর্ণের।
কানাডিয়ান গায়ক দ্য উইকেন্ড দর্শক-শ্রোতাদের চমকে দিয়ে সংগীত পরিবেশনা নিয়ে হাজির হন মঞ্চে। ভোটারদের স্বচ্ছতার অভাব, হিপ-হপ ও আরঅ্যান্ডবি শিল্পীদের যথাযথ স্বীকৃতি না দেওয়ার অভিযোগ তুলে গতবার গ্র্যামি বয়কট করেছিলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে রেকর্ডিং অ্যাকাডেমির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হার্ভি মেজন জুনিয়র মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমরা শুনেছি, সেভাবে কাজ করেছি ও আমরা পরিবর্তন এনেছি।’
‘ডাই উইথ অ্যা স্মাইল’ গানের মাধ্যমে সেরা পপ দ্বৈত/দলীয় পারফরম্যান্স স্বীকৃতি পেয়েছেন লেডি গাগা ও ব্রুনো মার্স। তারা ‘ক্যালিফোর্নিয়া ড্রিমিং’ শিরোনামের একটি গান পরিবেশন করে লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত ও আগুন মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নেওয়া অগ্নিনির্বাপকদের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সমবেত করে ‘উই আর দ্য ওয়ার্ল্ড’গানটি গেয়েছেন স্টিভি ওয়ান্ডার। এটি ছিল প্রয়াত সংগীত প্রযোজক কুইন্সি জোন্সের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। তার প্রযোজিত মাইকেল জ্যাকসনের বিখ্যাত গান ‘ডোন্ট স্টপ টিল ইউ গেট এনাফ’ গানটি পরিবেশন করেছেন জ্যানেল মোনা।
২ ফেব্রুয়ারি (বাংলাদেশ সময় ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্রিপ্টো ডটকম অ্যারেনায় গ্র্যামির জমকালো মঞ্চে অগ্নিনির্বাপকরা হাজির হলে অতিথিরা সবাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সংগীতের পেশাদারকর্মীদের কল্যাণে অর্থ তহবিল সংগ্রহ করেছে রেকর্ডিং অ্যাকাডেমি ও এর অধীভুক্ত দাতব্য সংস্থা মিউজিকেয়ারস। যুক্তরাষ্ট্রে সিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্কে সরাসরি সম্প্রচার চলাকালে ৭০ লাখ ডলার জমা হয়েছে। টানা পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দক্ষিণ আফ্রিকান কমেডিয়ান ট্রেভর নোয়া।